Rose Good Luck ভালবাসার সাতকাহন (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-১৬) Rose Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ৩০ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:১০:০৯ রাত



Good Luck লতার চাকরিটা শেষ পর্যন্ত পার্মানেন্ট হয়ে ফুলটাইম হয়ে গেছে গত মাসে। মাস শেষে হাতে কিছু থাকবে। স্বস্তি। মাসের শুরু থেকে তাই মন ভাল। কিন্তু সকাল থেকে কেবলই খারাপ পেশেন্ট আসছে। একজন ভর্তির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা গেছে। লতার মনটা খারাপ হয়ে আছে। গতরাতে ওভারটাইম করতে হয়েছে। সন্ধ্যার ডিউটি যার সে ছুটিতে গেছে। একটানা দুই শিফট। একটু আধটু ঝিমানো গেলেও শরীরটা নোংরা আর দুর্বল লাগছে। মাথা ও ঘুরছে। বমিভাব হচ্ছে।

মেজাজটাও খারাপ। রাজী হওয়া উচিত হয়নি। মানুষের শরীর। এত অত্যাচার ঠিক না। বাসায় মা বা পরী থাকলে হয়ত এমন হত না। দুইবার বাস বদলে আবার অতদূর হেটে বাসায় গিয়ে রান্না করে খাওয়া - অসম্ভব। কিন্তু গোসল খুব জরুরী ছিল। ' ইশ! জীবনে আর এই ভুল হবে না' মনে মনে নিজের কান ধরল লতা। যদিও জানে মাস শেষে টাকাটা হাতে এলে ডিউটির এই কষ্ট সে ভুলে যাবে। বরং আবার এমন কিছু সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে।

'আল্লাহ, যেন ঠিকমত বাসায় পৌঁছি.. ' দোয়া করেই হতাশ হয়ে গেল লতা। মনে পড়ল মা, পরী গ্রামের বাড়িতে।

' শমশেরনগর লুলু খালার বাসায় গেলেই ভালো হবে ' মনে আসতেই মন খুশি হয়ে গেল ওর। এরপরই নিজের বোকামীর জন্য দু:খ হল ওর -'কাল দুপুরে খালার কথা মনে পড়লে কি হত? '

..........

বিউস এর পাশ দিয়ে চলে যেতে যেতে লতা অবাক হল, । 'বন্ধ নাকি? ' একটা ছোট্ট নি:শ্বাস পড়ল লতার। নামী দামী লেখিকা হওয়ার জন্য ক'দিন আগেও কত চেষ্টা আর অপচেষ্টাই না সে করেছে!' টাকা আর খ্যাতির আকর্ষণে ! অন্ধ সেই মোহের ফল নগদ মিলেছে। অজান্তেই মাথা নিচু হয়ে গেল তার। খুব হয়ত আহামরি লিখত না। তবু সব যত্ন করে রাখা আছে। শেষ জীবনে নিজের জীবন নিয়ে একটা উপন্যাস লেখার ইচ্ছা হল লতার। ' সব লিখব। কেমন হবে? কতদিন বাঁচব? ' ভেবে আনমনা হয়ে গেল সে।

লতার পিছন থেকে হঠাৎ আওয়াজ দিল গাড়িটা। চমকে প্রায় লাফিয়ে রাস্তা থেকে পাশে নেমে গেল সে। একটু রাগ হল। নিজের উপর না গাড়িওয়ালার উপর নিজেই বুঝল না। রাগ চোখে গাড়ির দিকে তাকিয়ে সে চিন্তার খেই হারিয়ে ফেলল।

' মিনার মাহমুদ! '

কোলে বাচ্চা কার! আকাশ থেকে পড়ল লতা। রেখা হাসিমুখে হাত নাড়ল লতাকে দেখে। গাড়ি থামল না।

লতার শরীরটা আগের চেয়ে দ্বিগুণ খারাপ লাগতে শুরু করল। তীব্র ঈর্ষায় বিস্বাদ লাগল জীবনটা। নিজের ভুল আর দোষ ভুলে সব আক্রোশ আর ঘৃণা নিয়ে আকাশের ওপারে

সৃষ্টিকর্তার দিকে চোখ তুলে তাকাল, ' যা ইচ্ছা করার ক্ষমতা তোমার! করবেইতো! '

মিনার মাহমুদ গ্রামের সীমানায় ঢুকে অবাক হয়ে গেলেন। শরীর মন জুড়িয়ে গেল। এতগুলি বছরেও সেই সবুজ রয়ে গেছে গ্রামটা! তেমন কিছুই বদলায়নি। মনে মনে হিসাব করতে লাগলেন কত বছর পর এসেছেন।

ছেলে বউকে দেখে মা প্রথমে নিথর দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর কাছে না গিয়ে একতলা টিনশেড বাড়িটার খোলা বারান্দায় রাখা মোড়া দুটোর একটাতে বসে আঁচলে মুখ ঢেকে নিরবে কাঁপতে লাগলেন। বাবা অপ্রস্তুত হেসে তাড়া দিয়ে বাড়ির পুরানা কাজের লোকটাকে বাজারে পাঠিয়ে নিজে জাল নিয়ে পুকুরে নেমে গেলেন। খাবার দিয়ে ধরার পর ও জোর করার প্রতিবাদে লাল মোরগটা আশ পাশে জানান দিল ' মেহমান এসেছে! ' তার অনেক আগেই বাজারে জানাজানি হয়েছিল নতুন গাড়ি এসেছে। ছেলের দল দেখে গেছে বুলুদের বাড়ির বুলু বউ বাচ্চা নিয়ে বাড়ি এসেছে! বুলু শহরের মানী মানুষ, দামী লেখক এসব সবাই জানে। তার অহংকারে গ্রামের সবারই ভাগ আছে। কিন্তু আসল নামে গ্রামের বুলুকে খুব কম লোকেই চেনে।

লেখক বাচ্চা কোলে বারান্দায় উঠলেন। নিচু হয়ে বাচ্চাটাকে মায়ের কোলে দিয়ে নিজে মা'কে বুকে নিলেন। মা নাতনীকে বুকে চেপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।

ইতিমধ্যে প্রতিবেশী বউ ঝি চাচি ফুফু ভীড় করে ফেলেছে। তাদের অনেকেই মেহমানদারিতে ব্যস্ত হয়ে গেল।

পরদিন লেখক হাসিমুখে জানালেন বাচ্চাটা তিনি কিভাবে পেয়েছেন। মা বিশ্বাস করলেন না। বাবা তার ছেলেকে অনেক দোয়া করলেন একটা অনাথ বাচ্চাকে আদরে মানুষ করার জন্য বুকে তুলে নিয়েছে জেনে। ফুফু চাচিদের মধ্যে কিছু ফিসফিস শোনা গেল। কিন্তু অসম্ভব মায়াময় চেহারার পুতুল পুতুল বাবুটা সবার মন কেড়ে নিল। রেখাও খুশিমনে স্বীকার করল মেয়ে মায়ের চেয়ে হাজারগুন সুন্দর হবে।

গ্রামের সবুজ আর সহজ জীবনে অকৃপণ ভালোবাসা আর আদরে যত্নে পলকে কয়েকটা দিন চলে গেল। তারা আর বাবা মা'কে গ্রামে রেখে যেতে রাজী হলেন না। সবাইকে কাঁদিয়ে পরোপকারী মানুষ দুজন পূর্ণতার শান্তি নিয়ে বাকী জীবনের জন্য সারা জীবনের ভালোবাসার গ্রাম ছাড়লেন। জানতেন চাল চলনে অনেক কিছুই মিলবে না। তবু আবার ছেলে দূরে চলে যাবে ভয়ে সাহস করে রাজী হয়ে গেলেন। মানুষ দুটোর অভ্যাসের পরতে পরতে গ্রাম্য সুখ দু:খ আর তার প্রকাশ থাকবে জেনেও শুধু অকৃত্রিম ভালবাসা আর দোয়ার জন্য সব মেনে অন্য মানুষ হয়ে মিনার মাহমুদ আর রেখা ফিরে আসেন শহরে। সপরিবারে। নিজেদের পৃথিবীতে। শান্তির নীড়ে।

এরপরে লেখকের জীবনে লতা পর্ব খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। সপ্তাহখানেক লতার অবিরাম ফোনের একটাও রিসিভ করলেন না লেখক।

অপমানিতা লতা বুঝল, এখানেই সমাপ্তি। সে ও ব্যাপারটা মন থেকে একদিন ঝেড়ে ফেলল।

কারো জীবন কি কারো জন্য থেমে থাকে?

.....

মায়ের জন্য জীবনে প্রথম একটা দামী শাড়ী কিনেছে লতা। প্যাকেটটা নিয়ে কাউন্টারে টাকা দিতে দিতে সে মায়ের চেহারাটা ভাবছিল।' ইশ! কি খুশি হবে মা! কলাপাতা রং এ মা'কে কী যে ভালো লাগে!

লতা তৃপ্ত মুখে মিষ্টি হেসে দোকানদারকে বলল, রাউন্ড ফিগারে দিই? দোকানদার এবারে আর না বলল না। লতা প্যাকেট হাতে এসিওয়ালা দোকানটা থেকে বের হবার সময় পাশ দিয়ে ঢুকতে থাকা মানুষের ভীড় থেকে চেনা পারফিউমের অস্তিত্ব টের পেল।

রিক্সায় বসে উদাস হয়ে ভাবল, ' একজন মানুষ শেষ পর্যন্ত একটা পারফিউম, বা কোন শব্দ, গান বা কবিতা হয়ে যায়। কোন কোন সম্পর্ক শুধু কোন বিশেষ তারিখ, মাস বা বছর হয়ে যায়। '

আবার কী মনে পড়তে মনের কাটাছেড়া জায়গায় জ্বালা করে উঠল। সে মনটাকে তুলে রাস্তার পাশের মার্কেটগুলির দোকানে সাজানো জিনিসের মধ্যে ছেড়ে দিল। 'পিছনে মুখ করে হাটার কী দরকার? '

লতার চাকরিটা শেষ পর্যন্ত পার্মানেন্ট হয়ে গেল লেখক মিনার মাহমুদের জন্যই। কিন্তু লতা এ কথা কোনো দিনই জানতে পারবে না। যে সিড়ি সে ব্যবহার করতে চেয়েছিল নিজেকে উঁচুতে তুলে ধরার জন্য, সেই সিড়ি-ই নিজেকে তার থেকে দূরে সরিয়ে নিলেও তাকে তার যায়গায় পৌঁছিয়ে দিয়েছে। অনেক কিছুই আমরা কো-ইন্সিডেন্স মনে করি। কিন্তু আসলেই কি সেগুলো দৈবাৎ হয়ে থাকে?

মিনার মাহমুদ লতার জীবনে এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়েই রইলো।

জীবন তার নিজের গতিতে চলে... একসময় লতাও সব ভুলে যাবে।

কিন্তু হৃদয়ের কিছু কিছু দাগ কি কখনো মুছে? কষ্টগুলো কি ঘুচে? বিষন্ন ট্রেইলগুলো কি আনন্দের নির্যাসে ঢেকে যায়? Rose Good Luck

(ক্রমশঃ)

বিষয়: সাহিত্য

১২৭২ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

279823
৩০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:৩৯
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : কিন্তু হৃদয়ের কিছু কিছু দাগ কি কখনো মুছে? কষ্টগুলো কি ঘুচে? বিষন্ন ট্রেইলগুলো কি আনন্দের নির্যাসে ঢেকে যায়?

যায় হয়তো মাঝে মাঝে আবার যায় না।

তবে লেখাটা সুন্দর হয়েছে ধন্যবাদ।
৩০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:৫৯
223517
মামুন লিখেছেন : প্রথম মন্তব্যকারী হিসেবে আপনাকে অভিনন্দন। আজকের লিখাটি অনেক সময় নিয়ে লিখছি, যদিও যেভাবে চেয়েছিলাম, তেমন্টি করে শেষ করতে পারি নাই। অনেক গুলো চরিত্রের এই গল্পটিতে এই তিনটি চরিত্রের এই পর্বেই যবনিকাপাত করিয়েছি।
আপনার অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।Good Luck Good Luck
279854
৩১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:৪৮
আফরা লিখেছেন : কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না ।প্রথম একটু খারাপ লাগে সময়ে সব ঠিক হয়ে যায় ।
৩১ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৯:৪৩
223561
মামুন লিখেছেন : যে বিষয়টাই একসময় প্রচন্ড খারাপ হয়ে ধরা দিত,নিজের বেলায় তা ব্যর্থতার চাবুক হয়ে নিজেকেই আঘাত করে সময়ের বিবর্তনে - খুব সুন্দর বলেছেন। সবাই যদি এই কথাগুলো হৃদয়ে উপলব্ধি করে আমলে নিত, তবে জীবন হত খুবই সহজ-সরল।
গভীর অনুভূতি রেখে গেলেন, সেজন্য অনেক শুভেচ্ছা।Good Luck Good Luck
279864
৩১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:৫৪
কাহাফ লিখেছেন :
পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন জন মা-বাবার সাথে আবার মিলে যাওয়া অনেক অনেক ভালো লেগেছে! সাময়িক স্বার্থ বা মায়ায় পড়ে তাঁদের থেকে দূরে চলে যাওয়া সন্তানদের চরম একটা ভূল!
অনেক অনেক ভালো লাগা রেখে যাচ্ছি..... Rose Rose Rose
৩১ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৯:৪৪
223562
মামুন লিখেছেন : আপনার ভালো লাগার অনুভূতি রেখে গেলেন, অনেক ভালো লাগল।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
279962
৩১ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:৩৪
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : আপনার জীবন থেকে নেয়া গল্পগুলো পড়তে অনেক ভাল লাগে। ধন্যবাদ। কিছু পরামর্শ ছিল। কিভাবে দেব? পাঠকের অনুভূতি না জানলে লেখক কি করে বুঝতে তার জনপ্রিয়তা।
৩১ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:৩৩
223627
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ। সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন।
আপনার পরামর্শ সাদরে গ্রহনীয়। এখানে মন্তব্যেও দিতে পারেন। আমার মেইল আইডি আপনার কাছে রয়েছে। যেখানে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সেখানেই দিতে পারেন।
শুভেচ্ছা রইলো।Good Luck Good Luck
280049
৩১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:১৫
এস এম আবু নাছের লিখেছেন : লাইক দিয়ে রাখলাম। Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up
তবে লতা বা মিনারের চরিত্র কী এখানেই শেষ হতে চলল? আপনার মেইল আইডি আমারও দরকার ছিল।
৩১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:৪৭
223723
মামুন লিখেছেন : হ্যা, লতা ও মিনারের চরিত্র এখানেই শেষ।
আমার মেইল আইডিঃ
280337
০১ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০০
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : আপনার ভালবাসার সাতকাহন সিরিজ শেষ হয়েগেলে আমাকে একটু নটিফাই করার অনুরোধ রইলো। Day Dreaming Day Dreaming সব পর্ব এক সাথে পড়ে নেবো ইনশা আল্লাহ্ Waiting Waiting
০২ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:৫৯
224033
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ হ্যারী।
ইনশা আল্লাহ অবশ্যই করবো।
Good Luck Good Luck
281371
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:২৬
নাছির আলী লিখেছেন : অনেক অনেক মুবারকবাদ পিতা মাতার অনুভৃতি
নিয়ে সুন্দর লেখার জন্য |
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:৫৯
224960
মামুন লিখেছেন : ভালো লাগা রেখে যাবার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File